কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার বার বার দাবি করে আসছে, করোনা অতিমারির ধাক্কা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশের অর্থনীতি। কিন্তু এমপ্লইজ প্রভিডেন্ট ফান্ড অর্গানাইজেশন (ইপিএফও)-এর তথ্য র্থেকে ইঙ্গিত মিলেছে যে, অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর পথ এখনও অমসৃণ।

নয়াদিল্লি: কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার বার বার দাবি করে আসছে, করোনা অতিমারির ধাক্কা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশের অর্থনীতি। কিন্তু এমপ্লইজ প্রভিডেন্ট ফান্ড অর্গানাইজেশন (ইপিএফও)-এর তথ্য র্থেকে ইঙ্গিত মিলেছে যে, অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর পথ এখনও অমসৃণ। এই তথ্য অনুসারে, সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবরে ইপিএফও-তে ৩০ হাজার নথিবদ্ধ সংস্থা কমেছে। এর থেকে ইঙ্গিত মিলেছে, সমস্ত কোম্পানিই প্রত্যাশিতভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। দীর্ঘ সংকটের কারণে বেশ কিছু কোম্পানি এখনও কাজ ছাঁটাই করছে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ কথা জানানো হয়েছে।

শুধু ইপিএফও নথিভূক্ত সংস্থার সংখ্যাই নয়, অক্টোবরে ভবিষ্যনিধি তহবিলে যোগদানকারী কর্মী বা সদস্যের সংখ্যাও ১৮ লক্ষ কমেছে।সেপ্টেম্বরে অবসরকালীন তহবিলে ব্যক্তিগত যোগদানকারীর সংখ্যা ছিল ৪৭.৬৮ মিলিয়ন। অক্টোবরে তা কমে হয়েছে ৪৫.৮২ মিলিয়ন। এক সরকারি আধিকারিক ওই সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ইপিএফও-তে নথিভূক্ত সংস্থার সংখ্যা এপ্রিলে তাৎপর্য্যপূর্ণভাবে কমেছিল। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতিমাসেই এই সংখ্যার উন্নতি ঘটছিল। কিন্তু অক্টোবরে সেই সংখ্যা আবার কমে গিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই আধিকারিক বলেছেন, এর মধ্যে লকডাউন শিথিল হয়েছিল, কাজেই তা জটিল পরিস্থিতি। আর্থিক সংকোচন ও বৃহত্তর চাহিদার অভাব এর কারণ হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই খরচ বাঁচানোর পাশাপাশি ইপিএফ কন্ট্রিবিউশন থেকে দূরে থেকেছে।
ওই আধিকারিক আরও উল্লেখ করেছেন যে, ইপিএফও-তে অবদানকারী সদস্যের সংখ্যা এপ্রিলে অনেকটাই কমে গিয়েছিল। তারপর মে থেকে ওই সংখ্যা বেড়েছিল। তাও ওই সংখ্যা সেপ্টেম্বরেও প্রাক-লকডাউন পর্বের সময়ের থেকে নিচেই ছিল। সেপ্টেম্বরেই চলতি অর্থবর্ষে সর্বাধিক অবদানকারী সদস্য ছিলেন।
বিগত কয়েক মাসে অর্থনীতি দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করলেও ভারতের সমস্যার সমাধান এখনও বাকিই রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইপিএফও ও ইপিএফের সংখ্যা হ্রাসের মাধ্যমে প্রতিফলন ঘটেছে যে, কিছু কোম্পানি হাল শুধরে ঘুরে দাঁড়াতে কতটা সমস্যার মুখে পড়েছে। অর্থনীতিবিদদের একাংশ মনে করছেন, ঘুরে দাঁড়ানোর এই প্রক্রিয়ায় সরকারি সহায়তা হয়ত পর্যাপ্ত নয়।
উৎসবের মরশুমে চাহিদার বৃদ্ধি দেখা দিয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াজি বৃদ্ধির প্রবণতা কর্মসংস্থানহীনতার উচ্চহার ও আয়ের স্বল্পতার পরিপ্রেক্ষিতে এমনটা নাও থাকতে পারে বলে অনুমান বহু অর্থনীতিবিদেরই।
সংবাদমাধ্যমের দেওয়া পরিসংখ্যান বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বরে ইপিএফও-তে ৪ কোটি ৭৬ লক্ষ ৮০ হাজার কর্মীর টাকা জমা পড়েছিল। অক্টোবরে সেই সংখ্যা প্রায় ১৮ লক্ষ কমে হয়েছে ৪ কোটি ৫৮ লক্ষ ২০ হাজার। ওই সময়ে নথিবদ্ধ সংস্থা ছিল ৫ লক্ষ ৩৪ হাজার ৮৬৯টি। অক্টোবরে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ লক্ষ ৪ হাজার ৪৪। কেন্দ্রীয় প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, ’’এটি একটি জটিল পরিস্থিতি। অর্থনৈতিক সংকোচনের কারণে এবং বৃহত্তর চাহিদা ঘাটতির কারণে এমনটা হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে,সংস্থাগুলি হয়তো আপাতত ব্যয় সংকোচনের জন্য ইপিএফও-তে টাকা জমা দিচ্ছে না।‘‘ ওই আধিকারিক মনে করিয়ে দিয়েছেন, গত মে মাসের পরে কর্মী ও সংস্থার পতন এত বিপুল হারে হয়নি। ওই সময় থেকে দেশে লকডাউন জারি হয়েছিল। পরিস্থিতি অক্টোবরের এই অধোগতির আগে পর্যন্ত ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছিল।

সেপ্টেম্বরে ৬.৭ শতাংশ নেমে যাওয়ার পর অক্টোবরে কর্মহীনতার হারের সামান্য উন্নতি হয়েছে। অক্টোবরে কর্মসংস্থানহীনতার হার ৭ শতাংশ।
করোনা সংক্রমণের আগে থেকেই দেশের অর্থনীতি ঝিমুচ্ছিল। কর্মসংস্থানের চিত্রও আশাব্যঞ্জক ছিল না। গত বছরের মে মাসে বলা হয়েছিল,, ৪৫ বছরে দেশে বেকারত্বের হার সর্বোচ্চ। অতিমারী এবং লকডাউন সেই সঙ্কটকে আরও গভীরতর করেছে। গত কয়েক মাসে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিল, কিন্তু সঙ্কট যে এখনও কাটেনি তা ফের স্পষ্ট করে দিল ইপিএফও-র পরিসংখ্যান। ছোট ও মাঝারি শিল্পগুলির পুনরুজ্জীবনের জন্য কেন্দ্রের অর্থনৈতিক প্যাকেজ যে কাজে লাগেনি তা-ও এই পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট হয়েছে বলে মনে করছেন অনেক অর্থনীতিবিদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here