পুরুলিয়া : সন্তান তার মায়ের কাছেই সবচেয়ে বেশি নিরাপদ। সেই মা –ই তার প্রেমিকের সঙ্গে যোগসাজশ করে শিশুর শরীরে সুচ ঢুকিয়ে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। একটা, দুটো নয়, সাত-সাতটি সুচ। তিলে তিলে মারা যায় সেই সাড়ে তিন বছরের শিশু। ২০১৭ সালের এই নারকীয় ঘটনা সারা দেশে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল। মঙ্গলবার এই ঘটনায় অভিযুক্ত মা ও তার প্রেমিককে ফাঁসির সাজা দিল পুরুলিয়া জেলা আদালত।
এদিন মামলার রায় ঘোষণা করেন, পুরুলিয়া জেলা আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক রমেশকুমার প্রধান। আদালতে কড়া নিরাপত্তার ঘেরাটোপে নিয়ে আসা হয় দোষী সাব্যস্ত দুই আসামীকে। গত চার বছর ধরে চলা এই মামলায় সোমবার সাজা ঘোষণার দিন ঠিক হয়েছিল। সরকারী আইনজীবী দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করলে বিচারক রায়দান করেননি। মঙ্গলবার দোষীদের ফাঁসির সাজা শোনান বিচারক।
দোষী মা মঙ্গলা গোস্বামী, পুরুলিয়ার থানার “ভুল-সতেরো” গ্রামে বাপের বাড়িতে থাকতেন। স্বামী পরিত্যক্তা মঙ্গলাকে ও তার শিশুকন্যা সুপ্রিয়া গোস্বামীকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসে নদীয়াড়া গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত হোমগার্ড সনাতন গোস্বামী। অবসর নেওয়ার পর ঝাড়ফুঁক, বশীকরণ, ওঝাগিরি করতেন তিনি। সেই সঙ্গে খোল কীর্তন বাজিয়ে ঠাকুরের গানও গাইতেন তিনি।
২০১৭ সালের ১১ জুলাই, দু’সপ্তাহের বেশি সময় ধরে দিনের অধিকাংশ সময় কান্নাকাটি করতো। সঙ্গে জ্বর, সর্দি কাশির মতো উপসর্গ নিয়ে ভুগছিল সাড়ে তিন বছরের শিশু কন্যা সুপ্রিয়া গোস্বামী। কিন্তু বাচ্চাটির চিকিৎসা করাতে রাজি ছিল না শিশুটির মা মঙ্গলা গোস্বামী। তারপরই সনাতনের পুত্রবধূরা এবং গ্রামের প্রতিবেশী মহিলারা চাপ দেয় চিকিৎসা করানোর জন্য। এরপরই মঙ্গলা তাকে নিয়ে আসেন পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো সদর হাসপাতালে। শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় সন্দেহ হয় চিকিৎসকদের। তারপরই হাসপাতালে এক্স রে রিপোর্টে ধরা পড়ে পাঁজরে, তলপেটে ও যৌনাঙ্গে ৭ টি সুচ রয়েছে। চাইল্ড লাইনের পক্ষ থেকে অভিযোগ দায়ের করা হয় পুরুলিয়া থানায়।
ওইদিন সন্ধ্যায় পুরুলিয়া হাসপাতাল থেকে শিশুটিকে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখান থেকে স্থানান্তর করা হয় কলকাতার এসএসকেএমে। ১৮ জুলাই কলকাতা এসএসকেএমে অস্ত্রোপচারে বের করা হয় ৭ টি সুচ। ২০ জুলাই রাতে এসএসকেএম হাসপাতালে মৃত্যু হয় ওই শিশুকন্যার।